সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখালো খুলনা বিভাগে :সারাদেশে করোনায়১৫৩ জনের মৃত্যু :চুয়াডাঙ্গায় করোনাভাইরাসে ৫ জনসহ উপসর্গ নিয়ে ১১ জনের মৃত্যু : নতুন শনাক্ত ১৫২


★চুয়াডাঙ্গা হাসপাতালে ৭৭জন ও বাড়িতে ১২৬৪ জন

★হাসপাতালের হলুদ জোনেও অর্ধশতাধিক

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় করোনা ভাইরাসে সংক্রমিতদের মধ্যে জনসহ উপসর্গ নিয়ে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে রোববার চুয়াডাঙ্গায় আরও ১৫২জন করোনা ভাইরাস সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়েছেন আরও ৪জন। চুয়াডাঙ্গায় বর্তমানে শনাক্তকৃত সক্রিয় রোগী রয়েছেন ১৩৪১ জন। এর মধ্যে হাসপাতালে ৭৭ জন, বাড়িতে ১২৬৪ আইসোলেশনে রয়েছেন। এছাড়াও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের হলুদ জোনে ভর্তি রয়েছেন ৬৫ জন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসারসূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার কুন্দিপুর গ্রামের ফজলুল এর কন্যা আল্লাদি খাতুন বেশ কিছুদিন ধরে সর্দি কাশি জরে ভুগছিলেন। তার নমুনা নিয়ে র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট করা হয়। ২৬ জুন করোনা ভাইরাস পজিটিভ হয়। গত বৃহস্পতিবার শ্বাস কষ্ট বাড়লে সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। করোনা ওয়ার্ডে তথা রেডজোনে ভর্তি করা হয়। গতপরশু শনিবার দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ৬০বছর বয়সী আল্লাদি খাতুন মারা যান। কুন্দিপুরের শফিকুল ইসলামের ছেলে নজরুল ইসলামের শাসকষ্ট বাড়লে শনিবার বিকেল ৫টার দিকে সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। রোববার সকাল পৌনে ৮টার দিকে ৬৫ বছর বয়সী নজরুল ইসলাম মারা যান। তারও নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফনের অনুমোদন দেয়া হয়।
দামুড়হুদা উপাজেলার ফকিরপাড়ার মৃত ইউসুফ মন্ডলের ছেলে গোলাম হোসেনকে শনিবার রাত ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সর্দি কাশি জর ও শ্বাসকষ্ট থাকায় তাকে হাসপাতালের হলুদ জোনে ভর্তি করা হয়। গতকাল রোবাবর সকাল পৌনে ৮টার দিকে ৭০ বছর বয়সী গোলাম হোসেন মারা যান। গতকাল বৃহস্পতিবার তার লাশ স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফন করা হয়। দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের নাসির উদ্দীনের স্ত্রী নাজমা খাতুন গতকাল রোববার সর্দি কাশি জ¦র ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। তার কোভিড পরীক্ষা করানো হয়। রেপিড এন্টিজেন টেস্টে করোনা পজিটিভ হয়। হাসপাতালের রেডজোনে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়। ভর্তির ঘণ্টাখানেকের মাথায় রাত সাড়ে ৭টার দিকে ৪০ বছর বয়সী নাজমা খাতুন মারা যান। তার মৃতদেহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফনের নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের হাসনহাটি গ্রামের তৈয়ব আলী বিশ্বাস ছেলে পল্টু বিশ্বাসকে গতপরশু শনিবার সকাল ৭টার দিকে সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সর্দি কাশি জর ও গায়ে ব্যথাসহ শ্বাস কষ্ট থাকায় তাকে হাসপাতালের হলুদ জোনে ভর্তি করা হয়। নেয়া হয় নমুনা। ওইদিনই রাত ২টা ৫৫ মিনিটের দিকে মারা যান ৪২ বছর বয়সী তৈয়ব আলী। তারও মৃতদেহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফনের নির্দেশনা দেয়া হয়। সদর উপজেলার নেহালপুর গ্রামের গোলাপ নাথ হালদারের ছেলে মৃত্যঞ্জয় হালদার সম্প্রতি সর্দি কাশি জরে ভুগতে শুরু করেন। গত শুক্রবার তার শ্বাস কষ্ট বাড়লে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। হলুদ জোনে ভর্তি করা হয়। নেয়া হয় নমুনা। গতকাল রোববার সোয়া ৪টার দিকে মারা যান ৭৬ বছর বয়সী মৃত্যুঞ্জয়। তারও মৃতদেহ স্বাস্থ্য বিধি মেনে শেষকৃত্য সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেয়া হয়। এছাড়াও চুয়াডাঙ্গায় করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন পাশ্ববর্তী ঝিনাইদহ জেলার বাটিকুমড়া গ্রামের বিপুল। তিনিও সর্দি কাশি জরে ভুগছিলেন। তাকে গত শুক্রবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। হলুদ জোনে ভর্তি করা হয়। গতকাল রোবাবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ২৫ বছর বয়সী বিপুল মারা যান। তারও মৃতদেহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফনের নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য বিভাগ।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের সাদেক আলী মল্লিকপাড়ার সহিদুল ইসলামের স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন গতকাল রোববার সকালের দিকে তিনি নিজবাড়িতে মারা যান। তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। বাড়িতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নেয়া হয় হাসপতালে। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গতকাল বাদ আছর চুয়াডাঙ্গা জান্নাতুল মওলা কবরস্থান জামে মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়। ৩৫ বছর বয়সী ফরিদা ইয়াসমিনও করোনা উপসর্গে ভুগছিলেন বলে প্রতিবেশীসূত্রে জানা গেছে। তবে পরিবারের তরফে তেমন কোন তথ্য দেয়া হয়নি। জেলা শহরের শান্তিপাড়ার নূরুল ইসলামের স্ত্রী রহিমা বেগম বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। গতকাল রোববার সকালের দিকে মারা যান ৫৫ বছর বয়সী রহিমা বেগম। তারও নমুনা পরীক্ষা করানো হয়নি। গতকালই বাদ আছর তারও মৃতদেহ একই কবরস্থানে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এদিকে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে রেফার্ড করা করোনা রোগীর মধ্যে শহরের মুক্তিপাড়ার এক নারীসহ দুজন মারা গেছেন। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ জলিবিলা গ্রামের মৃত আনছার আলীর ছেলে শরিফুল ইসলামকে (৪৫) গত ১ জুলাই করোনা সংক্রমণ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল রোববার তার অবস্থা অবনতি হলে ঢাকায় নেয়া হয়। ঢাকা বক্ষ্মব্যাধি হাসপাতালে নেয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে শরিফুল মারা যান। এছাড়াও মুক্তিপাড়ার ওই নারীকেও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলে পথের মধ্যে তিনিও মারা যান।
এদিকে গতকাল রোববার চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ নতুন ৩৬৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট ল্যাবে প্রেরবণ কেরছে। এদিন পূর্বের ৩৭০ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া যায়। এর মধ্যে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত ১৫২ রোগী শনাক্ত হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, নতুন ৩৬৯ জনের নমুনা নিয়ে মোট ১৪ হাজার ৪শ ৪০ জনের নমুনা নেয়া হয়েছে। এদিন ৩৭০জনের পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে মোট ১৪ হাজার ১শ ৪০ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া গেছে। চুয়াডাঙ্গায় যে ১৫২ জন নতুন সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছে এর মধ্যে সদর উপজেলার ৬৮ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ২২ জন, দামুড়হুদা উপজেলার ১৮ জন ও জীবননগর উপজেলার ৪৪ জন। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৮০৫ জন। রোববার আরও ৪ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হলেন ২৩৪৬ জন। করোনা আক্রান্ত হয়ে চুয়াডাঙ্গা দুজন ও চুয়াডাঙ্গার বাইরে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ হিসেবে চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন ঠিক কতোজন তা স্পষ্ট করে বলেনি চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে চুয়াডাঙ্গায় জেলায় শতাধিক করোনা আক্রান্তের এবং চুয়াডাঙ্গার বাইরে আরও ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে তা গত পরশু এবং গতকালের দেয়া তথ্যের ভিত্তিকে জানা গেছে। যদিও উপসর্গ নিয়ে মৃতের সংখ্যা গত কয়েকদিনে অর্ধশতাধিক পার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *