মেহেরপুর প্রতিনিধি:মেহেরপুরে নজর কেড়েছে দৃষ্টি নন্দন কচুরীপানা ফুল। নদীনালা, খাল-বিল আর জলাশয়ে শস্য-শ্যামল সবুজে ভরপুর মেহেরপুরের ছোট বড় নদীনালা, খাল-বিল, জলাশয় আর বাড়ির পাশের ডোবায় এখন ফুটেছে দৃষ্টি নন্দন কচুরীপানা ফুল। বাংলাদেশের বিল-ঝিলে-হাওর-বাওড়ে বিভিন্ন জাতের বিভিন্ন রংঙের ফুল ফুঠে থাকে বিভিন্ন ঋতুতে। এসবের মধ্যে কিছু আছে যা আমাদের কাছে সৌন্দর্য বর্ধক, দৃষ্টিনন্দন, উপকারী আর কিছু আছে কোন কাজে আসে না। প্রাকৃতিক সম্পদ কে নিয়মন্ত্রাতিক ভাবে কাজে লাগাতে পারলে সম্পদে পরিনত হয় আবার সঠিক ভাবে কাজে না লাগাতে পারলে জঞ্জালে পরিনত হয়। কচুরীপানা তেমনি একটি বিভিন্ন নদী-নালা-খাল বিল, পুকুর, ডোবায় ও জলাশয়ে ফুটে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কে আরো বাড়িয়ে দেয়। জৈব সার তৈরিতে সাহায্য করে তেমনি নৌ চলাচলে, ফসল চাষাবাদে ব্যাঘাত সৃষ্টি কর থাকে। কচুরীপানা ও তার ফুল জনপ্রিয় না হলেও বিভিন্ন সময়ে মাছ, গবাদিপশুর খাদ্য ও জৈব সার হিসাবে এর ব্যবহার হয়ে থাকে। আমাদের দেশের কৃষকগন আলু ও পটলসহ বিভিন্ন সবজি চাষে কচুরিপানা ব্যবহার করে থাকে। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা জলাশয় থেকে কচুরীপানার ফুল উঠিয়ে খেলা করে। মেয়েরা খোপায় বাঁধে। কচুরীপানার ৭ টি প্রজাতি রয়েছে। কচুরীপানা মুক্তভাবে ভাসমান অবস্থায় বহু বছরজীবি জলজ উদ্ভিদ। এর পুরু চকচকে এবং ডিম্বাকৃতির পাতা বিশিষ্ট পানির উপরি ভাগে প্রায় ১ মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। এর কান্ড দীর্ঘ, বহু বিভক্তি মূল বের হয়। যার রং বেগুনী, সাদা, গোলাপী ও হলুদ হয়ে থাকে। একটি পুষ্প থেকে ৯-১৫ টি আকর্ষনীয় ৬ পাপড়ীর ফুলের থোকা বের হয়। কচুরীপানা খুব দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে। এটি প্রচুর পরিমানে বীজ তৈরি করে। ৩০ বছর পরও অঙ্কুরদগম ঘটাতে পারে। কৃষি বর্জ্য থেকে জৈব সার তৈরি করতে সময় লাগে ৭০ দিন কিন্তু কচুরীপানা থেকে সময় লাগে ৫৫ দিন। বর্ষা কালে দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে। কচুরীপানাতে বড় বড় কুঠুরি থাকে যা পানিতে পরিপূর্ন সামান্য আগাতে সহজে ভেঙ্গে যায়।
জানা যায়, কচুরীপানা অর্কিড সাদৃশ্য ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে স্কনক নামে এক ব্রাজিলিয়ন পর্যটক ১৮’শ শতাব্দীতে বাংলায় নিয়ে আসেন। এর পর থেকেই বাড়তে থাকে যা ১৯৯০ সালের মধ্যে বাংলার প্রায় প্রতিটি হাওর-বাওর-জলাশয়ে ভরে যায়। নৌকা চলাচল, পাট, ধান চাষে অযোগ্য হয়ে পরে। এই পরিস্থিতিতে ঐ সময় কার সরকার কচুরীপানা দৌরাত্ম্য হ্রাসে জলাভূমি আইন, স্থানীয় সরকার আইনসহ কয়েকটি আইন সংশোধন করে। ১৯৩৬ সালে কচুরীপানা আইন জারি করা হয়। সরকারি পৃষ্টপোষকতা ও ব্যক্তি উদ্দ্যোগে কচুরীপানা পরিষ্কার করা কার্যক্রম গ্রহন করা হয়। ১৯৩৭ সালে সব দলের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলা কে কচুরীপানা মুক্ত করার অঙ্গীকার ছিল। অবশেষে ১৯৪৭ সালে বাংলার জলাশয়গুলো কচুরীপানা থেকে মুক্তি লাভ করলেও এখনো বাংলার হাওর-বাওর-বিল-ঝিল,পুকর-ডোবা ও মুক্ত জলাশয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছে।
সম্প্রতি মেহেরপুরের নদী থেকে এসব কচুরীপানা পরিষ্কার করা হলেও এ ফুলের সৌন্দর্য মুগ্ধ করেছে জেলার মানুষকে।
মেহেরপুর জেলার ভৈরব নদী, মাথাভাঙা, কাজলা, স্বরস্বতী নদী, রুইমারীর খাল, ছেউটিয়া খাল, মাইলমারীর পদ্মবিল, চাঁদ বিল, হিন্দার বিল, ভোমরদহ বিলসহ সকল প্রকার নদীনালা, খাল-বিল, জলাশয়সহ বাড়ির পাশের ডোবায় এখন ফুটেছে দৃষ্টি নন্দন কচুরীপানা ফুল।
মেহেরপুরে এই কচুরীপানার দৃষ্টি নন্দন ফুল ফুটে আরো আকর্ষনীয় করে তুলেছে নদীনালা, খালবিলসহ জলাশয় এলাকাগুলোকে। এমন আরেকটি এলাকা মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের চোখতোলা। যেখানেও রয়েছে কচুরীপানা। যা দেখতে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের ভীড় জমে এ এলাকায়।