পশ্চিমাঞ্চল ডেস্ক : রফিকুল ইসলাম নতুন বউ নিয়ে বাড়ি আসার পর থেকে সবার মাঝে উৎসবের আমেজ। বিয়ের সাজে সজ্জিত পুরো বাড়ি। সাজানো হলো বাসর। কিন্তু কে জানতো এই রাতেই যে রফিকুলের শেষ রাত। এমন মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে। অনেকে বলতে থাকেন, এমন মৃত্যু মানা যায় না। মাত্র বিয়ে করেছে ছেলেটা। এদিন তার বাড়িতে ছিলো বৌভাতের অনুষ্ঠান। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। অনুষ্ঠানের দিন তার মৃত্যু হলো।
জানা যায়, বিবাহোত্তর বৌভাতের অনুষ্ঠানের সকল কার্যক্রম চলছিলো বেশ ধুমধাম করে। কনে পক্ষ ঢাকঢোল পিটিয়ে আনন্দ উল্লাস করে গাড়ি বহর নিয়ে উপস্থিতও হয় বরের বাড়িতে। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানেই খবর ছড়িয়ে পড়ে বর মারা গেছেন। এমনই হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে গত বুধবার মির্জাগঞ্জ উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নের বাজিতা গ্রামে। বিয়ের সব আয়োজন রেখেই ওইদিন বিকেল ৫টায় নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় বর মো. রফিকুল ইসলাম (২৫) এর মরদেহ। মির্জাগঞ্জ উপজেলায় এ রকম প্রথম কোনো ঘটনায় সর্বত্রই শোকের মাতম ছড়িয়ে পড়েছে।
পারিবারিকসূত্রে জানা যায়, গত সোমবার মির্জাগঞ্জ উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নের বাজিতা গ্রামের সফেজ মিয়ার ছেলে মো. রফিকুল ইসলামের সাথে পার্শ্ববর্তী বেতাগী উপজেলার বাস-া গ্রামের মো. মন্নান মিয়ার মেয়ে ময়না আক্তারের (১৮) সাথে কনের বাড়িতে বরযাত্রী নিয়ে উভয় পক্ষের সম্মতিতে বিবাহ কাজ সম্পন্ন হয়। ওইদিনই মেয়েকে বৌ সাজিয়ে নিয়ে আসা হয় বরের নিজবাড়ি বাজিতা গ্রামে। একদিন পরই মঙ্গলবার রাতে বর রফিক নিজের বাড়িতে স্বাভাবিক জ্বর নিয়ে একটু অসুস্থ বোধ করে। গত বুধবার সকালে চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে নির্ধারিত তারিখে বুধবার বর রফিকের বাড়িতে কনের পক্ষের জন্য বৌভাতের আয়োজন করা হয়। বৌভাতে কনে পক্ষের লোকজন বরের বাড়িতে পৌঁছুলেই খবর আসে রফিক আর বেচেঁ নেই। বিয়ের আনন্দ ওখানেই থেমে যায়। একমাত্র সন্তান ছেলেকে হারিয়ে বাবা-মা উভয়েই পাগলপ্রায়। আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকাবাসীর সান্ত¦না দেয়ার কোনো ভাষা নেই। মেহমানদের জন্য রান্না করা খাবার বাড়ির আঙিনায় থরে থরে সাজানো পাতিলেই রয়ে গেছে। এদিকে স্বামীর মৃত্যুর খবরে জ্ঞান হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন নববধূ ময়না আক্তার। তার শরীরেও স্বাভাবিক জ্বর দেখা দিলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের তিনি ৪র্থ তালায় ৫নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। বর্তমানে তিনি সুস্থ আছেন। নিহত রফিকুল ইসলামের চাচা পশ্চিম চৈতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনসার উদ্দিন জানান, রফিকের বাবা সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে রেকর্ড অফিসে (সিভিল বিভাগ) কর্মরত আছেন। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে মা বাড়িতে থাকতেন। রফিক ও আমি রোববার একত্রে বিয়ের সকল কেনাকাটা করি কিন্তু আজ আমাদের মাঝে সে আর নেই। সব কিছুই শেষ হয়ে গেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *