বিশেষ প্রতিনিধিঃপশ্চিমের জেলাগুলোর হাটবাজারে নতুন পাটের আমদানি বৃদ্ধির পর দরপতন হয়েছে। দেড় মাসের ব্যবধানে মণপ্রতি দাম ১ হাজার টাকা পর্যন্ত কমেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা। হাটগুলোতে বিপুল পরিমাণ পাট উঠছে। চাষিরা বলছেন, এই দামে পাট বিক্রি করে তাদের লাভ থাকবে না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর আঞ্চলিক অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে যশোর জেলায় ১৫ হাজার ৪০০ হেক্টরে, ঝিনাইদহ জেলায় ২২ হাজার ৫২০ হেক্টরে, মাগুরা জেলায় ৩৫ হাজার ৪৯৫ হেক্টরে, কুষ্টিয়া জেলায় ৩৭ হাজার ৭৮৬ হেক্টরে, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ১৬ হাজার ৫৭৮ হেক্টরে ও মেহেরপুর জেলায় ২২ হাজার হেক্টরে পাটের চাষ হয়েছে। এবার চাষের শুরুতেই চাষিদের বৈরী আবহাওয়া মোকাবিলা করতে হয়। অনাবৃষ্টির কারণে সেচ দিয়ে বীজ বপন করতে হয়। এরপর খরার কারণে সেচ দিয়ে পাটগাছ রক্ষা করতে হয়। আবার পাট কাটার সময় পানির অভাবে জাগ দেওয়া নিয়ে চাষিরা সমস্যায় পড়েন। খাল-বিল-ডোবায় পানি না থাকায় গাড়ি ভাড়া করে দূরবর্তী নদীতে নিয়ে পাট জাগ দিতে হয়। আবার অনেক চাষি পুকুর ভাড়া নিয়ে পাট জাগ দেন। পাট কাটা, মাঠ থেকে বহন, জাগ দেওয়া ও পাট ধোয়ায় শ্রমিক খরচ বেশি পড়ে। এক হাতা পাটে গড়ে ১২ টাকা করে খরচ লাগে। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ বেশি পড়েছে। জুলাই মাসের শুরুতে নতুন পাট ওঠার পর প্রতি মণ বিক্রি হয় ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত দরে। এরপর আমদানি বাড়ায় দর কমতে থাকে। বর্তমানে প্রতি মণ পাট ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ঝিনাইদহের শৈলকূপা পাটের বড় মোকাম। শনিবার এই হাটে গিয়ে দেখা যায়, অন্তত ১২ হাজার মণ পাট উঠেছে। ভ্যান ও নসিমন বোঝাই করে চাষিরা হাটে পাট এনেছেন। রাস্তায় রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে। প্রতি মণ পাট ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়। শৈলকূপা উপজেলার ব্রহ্মপুর গ্রামের চাষি আব্দুল মোমিন বলেন, এবার দুই বিঘা জমিতে পাটের চাষ করেছেন। এবার পাট চাষে ভোগান্তির শেষ নেই। সেচ দিয়ে পাটের বীজ বুনতে হয়েছে। কাটার পর পানির অভাবে জাগ দেওয়া নিয়ে সমস্যায় পড়েন। ১৮ মণ পাট পেয়েছেন। শনিবার শৈলকূপা হাটে ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি করেন। এতে তার খরচের টাকা উঠবে না। নাদপাড়া গ্রামের চাষি লোকমান হোসেন বলেন, এবার সাড়ে ৩ বিঘায় পাটের চাষ করেছেন। চাষে খরচ বেশি হয়েছে। ২ হাজার টাকা মণ দরে পাট বিক্রি করেছেন। তার লাভ থাকবে না।
মেহেরপুর সদর উপজেলার তেরঘরিয়া গ্রামের চাষি মো. জিয়াউর রহমান জানান, তিন বিঘায় পাট চাষ করেছেন। পানির অভাবে এখনো জাগ দিতে পারেননি। তাদের এলাকায় খেতে পাট শুকাচ্ছে। জাগ দিতে পারছেন না চাষি। হাট-বাজারে নতুন পাট উঠেছে। শুকনো পাট প্রতি মণ ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

আগে এই অঞ্চলের পাটের প্রধান মোকাম ছিল খুলনার দৌলতপুর। সেখানকার ব্যবসায়ী ও সরকারি জুট মিলগুলো পাটের প্রধান ক্রেতা ছিল। সরকারি জুট মিলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে পাটের প্রধান ক্রেতা দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা বেসরকারি জুট মিলগুলো।
পাট ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম বলেন, বর্তমানে পাটের চাহিদা কমে গেছে। মিলগুলো কম কম পাট কিনছে। এ কারণে দাম কমে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর আঞ্চলিক অফিসের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আবু হোসেন বলেন, এবার পাটের ভালো ফলন হচ্ছে। তবে পানির অভাবে পাট জাগ দিতে সমস্যা হচ্ছে।