পশ্চিমাঞ্চল অনলাই ডেস্ক:ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবনের পরিবর্তে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে চলতি সপ্তাহেই রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারি হতে পারে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের দফতর বিষয়ক সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ সংশোধিত হচ্ছে। আইনের ৯ (১) ধারায় যেখানে ধর্ষণের সাজা যাবজ্জীবন ছিল, সেখানে মৃত্যুদণ্ড যুক্ত করা হচ্ছে।’
দেশে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ধর্ষণের ঘটনা এবং এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আইন সংশোধনের বিষয়ে কাছে মতামত ব্যক্ত করেন ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে গেছে। এর মধ্যে গত ৪ অক্টোবর নোয়াখালীতে গৃহবধূকে (৩৭) বিবস্ত্র করে নির্যাতনের এক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই ঘটনা জানাজানির পর ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। প্রায় সব মহল থেকেই ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখার দাবি জানানো হয়।
এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘ধর্ষণের শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড করে সংশোধিত ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০’ এর খসড়া মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হচ্ছে।’
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘এখন সংসদ অধিবেশন নেই। যে কারণে আশু পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী আগামী সোমবার রাষ্ট্রপতি বরাবর বিল আকারে সামারি পাঠাবেন। এর আগেই সোমবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। পরে তা প্রধানমন্ত্রী হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। রাষ্ট্রপতি ৯৩ (১) অনুচ্ছেদের বলে অধ্যাদেশ জারি করবেন এবং তা আইনে রূপ নেবে। এরপর সংসদ অধিবেশন বসলেই প্রথম বৈঠকে এই অধ্যাদেশ-কে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেয়া হবে।’
নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের প্রশ্নে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন এই রাজনীতিক। বলেন, ‘নারীর রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য ২০১১ সালে এই সরকার নারী উন্নয়ন নীতিমালা গ্রহণ করে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০, এই বিশেষ আইনটিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার করা। আগে ধর্ষণের বিচার হতো ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারা মোতাবেক। এই বিধি ১৮৬০ সালে করা।’
‘আজ নারীর যে ক্ষমতায়ন দেখছেন, তা রীতিমতো বিস্ময়। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, স্পিকার, মেজর-জেনারেল, বিচারপতি, বৈমানিক, মন্ত্রিত্বসহ সর্বত্রই নারীর অবাধ বিচরণ। এর আগে নারী-পুরুষের সমতার কথাটি সংবিধানেই সীমাবদ্ধ ছিল। শেখ হাসিনা যথাযথ পলিসি গ্রহণ করে আজ নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে বিশ্বমহলও প্রশংসা করছে।’
ধর্ষণের বিচার সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধনের জন্য যা যা করা দরকার, সরকার তাই করছে— এমনটি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ধর্ষিত নারীকে বিচার চাইতে হলে নিজেকে ভালো চরিত্রের প্রমাণ দিতে হয়। এর মধ্য দিয়ে একজন নারীকে হেয়প্রতিপন্নের অভিযোগ রয়েছে বহুদিনের। এভিডেন্স অ্যাক্ট-১৮৭২ ব্রিটিশদের করা। সরকার এই আইনকেও সংশোধনের উদ্যোগ নেবে।’
‘ধর্ষিতা নারীর শারীরিক পরীক্ষার যে পদ্ধতি ছিল, তা এই সরকারই ২০১৮ সালে বাদ দিয়েছে। উন্নতমানের কিট ব্যবহার করে ভিকটিমের পরীক্ষা নিশ্চিত করা হচ্ছে, যা ইউরোপ-আমেরিকায় হয়। এতে নারীর প্রতি অবমাননামূলক যে বিধান ছিল, তা বাতিল করা সম্ভব হয়েছে। আমরা ভুক্তভোগী সকল মা-বোনদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। নারীর সম্মান রক্ষায় আইনগত যা যা করা জরুরি, সরকার তা-ই করবে।’
ধর্ষণের মতো অপরাধ নিরসনে সরকার বদ্ধপরিকর— উল্লেখ করে এই আইনজ্ঞ বলেন, ‘আজ ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ডের জন্য যে দাবি উঠেছে, তার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইন সংশোধনের তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে। ধর্ষণের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথচ বিচার হয়নি বা হচ্ছে না, এমন ঘটনা কেউ দেখাতে পারবে না।’
‘ফেনীর নুসরাত হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে মাত্র সাত মাসে। ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে সেই মামলায়। বিশেষ সহকারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নিজে আমাকে নুসরাতের চিকিৎসার দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এমন আলোচিত প্রতিটি ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সংবেদনশীল।’
‘আপনি যদি বিএনপির সময়ে চোখ রাখেন, দেখবেন তারা ধর্ষণকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বৈধতা দিয়েছিল। এখনও আমরা দেখছি, কেউ কেউ সে পথেই হাঁটছে। যা জাতির জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আমরা গভীরভাবে লক্ষ্য করছি, কোনো কোনো মহল নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এবং সিলেটের এমসি কলেজের ধর্ষণের ঘটনায় যতটুকু সোচ্চার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুর ও তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে করা ধর্ষণ মামলা নিয়ে ততটা সোচ্চার না। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার এই প্রশ্নে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। সরকারি দলের কেউ অপরাধী হলে রেহাই পাচ্ছে, এমন দৃষ্টান্ত দেখাতে পারবেন না।’
‘বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডে ছাত্রলীগের আট নেতাকর্মীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। আবরার হত্যার দায়ে ছাত্রলীগের ২২ নেতাকর্মী কারাগারে রয়েছে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে তাদের বিচার হচ্ছে। প্রতিটি অপরাধের বিচার করতে হবে, সরকার এ বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’
বিএনপির শাসনামলের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ‘২০০১ সালের নির্বাচনের পর বরিশালে স্মৃতি কণা রাণী, বাগেরহাটের ছবি রাণী, ভোলার আট বছরের শিশু, গৌরনদীর পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা সাবিত্রী, সিরাজগঞ্জের পূর্ণিমা ধর্ষণের কথা কিন্তু মানুষ ভুলে যায়নি। বিএনপি সরকারের আমলে প্রায় ১৮ হাজার ধর্ষণের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, বিএনপির ২৫ মন্ত্রী-এমপি এসব ধর্ষণে মদদ দিয়েছিল। ওই সময় বিশ্বের গণমাধ্যমে ২০০ ধর্ষণের খবর গুরুত্বসহকারে প্রকাশ পায়।’
‘সরকার প্রতিটি ঘটনার বিচার করে যাচ্ছে এবং দোষীদের অবশ্যই শাস্তি ভোগ করতে হবে। আমরা চাই সরকারের ওপর মানুষ আস্থা রাখুক। কিন্তু সাধারণ মানুষের একটি সামাজিক আন্দোলন নিয়ে যখন রাজনৈতিক মতলববাজরা ফায়দা নিতে চায়, তখন অবাক হই। এতে মূল আলোচনা আড়ালে পড়ে যায়। ধর্ষণ প্রতিরোধে আমাদের ঐকমত্য জরুরি। এজন্য সচেতনতা জরুরি এবং সমাজের সকলেরই দায়িত্ব রয়েছে। মনে রাখতে হবে, নারীবান্ধব সরকার প্রধান শেখ হাসিনা যা করছেন, তা অন্য কেউ করতে পারেনি।’