দোস্ত গ্রামের ১০২ বছর বয়সী বৃদ্ধা মায়ের ঠিকানা শেষ পর্যন্ত রান্নাঘর: জোরপূর্বক ঘুমের ঔষধ খাওয়ানো ও নির্যাতনের কথা বললেন- বয়স্ক “মা”

দর্শনা অফিস: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দর্শনা থানাধীন  নিহালপুর ইউনিয়নের দোস্ত গ্রামের বসুতিপাড়ায় ৮ সন্তানের জননী বয়স্ক মায়ের ঠিকানা হয়েছে রান্নাঘরে। ছোট ছেলে ও বউ প্রতিদিন জোরপূর্বক ঘুমের ঔষধ খাওয়ায় এবং শারিরীক নির্যাতন করে রান্নাঘরে ফেলে রাখে এমনটাই কেঁদে বললেন, নহোরন নেছা (১০২) বছর বয়সী এক বৃদ্ধা ‘মা’। যে ৬ ছেলে ও ২ মেয়ে সন্তানের জন্ম দিয়ে বুকে আগলে রেখে তাদেরকে মানুষ করেছে আজ সেই সন্তানের কাছে এই ‘মা’ ভারী হয়ে গেছে! এর থেকে দুঃখঃ জনক ঘটনা আর কি হতে পারে? যে মা কষ্ট করে সন্তানদের লালনপালন করলো আজ তাদের কাছে ঠিকানা হয়েছে রান্নাঘরে। তাও আবার অতি আদরের শেষ সন্তান অর্থাৎ ছোট ছেলে, নাম তার আঃ সালাম এবং স্ত্রীর নাম রেশমা খাতুন।

ঘটনাসূত্রে জানাগেছে, বৃদ্ধা এই মা নহোরন নেছা দীর্ঘদিন যাবৎ তার চতুর্থ ছেলে আঃ হান্নান এর কাছে থাকে আর মাঝে মাঝে তার বড় মেয়ে আনোয়ারা বেগম তার বাড়িতে নিয়ে যায় এবং কিছুদিন রাখেন আবার দিয়েও আসেন। ইতি মধ্যে গত ১৩ তারিখ শনিবার ছোট ছেলে সালামের বাড়িতে দিয়ে আসেন চতুর্থ ছেলে আঃ হান্নান। তবে সেখানে তার বাড়িতে নিজ প্রয়োজন ছাড়া সবসময় বাড়ির মেইন গেইট বন্ধ করে রাখা হয়। যার কারনে অন্য ছেলেরা মায়ের খোঁজখবর নিতে চেষ্টা করলেও পারেন না। পরে ৪-৫ দিন কেটে গেলে প্রতিদিন ঘুমের বড়ি খাওয়ানো সহ নির্যাতনের কথা জানতে পেরে চতুর্থ ছেলে আঃ হান্নান তার বড় বোন আনোয়ারা বেগমকে খবর পাঠায় মায়ের অবস্থা খুব একটা ভালো না। এ কথা শুনেই আনোয়ারা বেগম তার ছোট ছেলে সাইফুল ইসলামকে সাথে নিয়ে তার মাকে দেখতে যায়। যেয়ে মায়ের কাছে যাওয়াই দেখে তার অবস্থা খুবই খারাপ আর হাওমাও করে কেঁদে পেলে আর বলে মা রে আমাকে তুই বাঁচা! তখন শীরের আঘাতের চিহ্ন দেখে মায়ের কাছে প্রশ্ন করলে কেঁদে বলে, মা এখান থেকে আমাকে নিয়ে যা, আমাকে ঘুমের বড়ি খাওয়ায় ওরা জোর করে। আর বাহিরে বের হতে গেলে আমাকে মারে। এ কথা শুনে  তার ছোট ভাই আঃ সালাম অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে তার বোনকে আর বলে, এখন তোর সময় হয়েছে? মরে যাচ্ছে তাই দেখতে এসেছিস? এদিকে, বৃদ্ধা মায়ের ৬ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে ২ ছেলে ও ১ মেয়ে মারা যাওয়াতে বর্তমানে ৪ ছেলে ১ মেয়ে আছে। তাই বড় মেয়ে হিসাবে তিনি বলেন, আচ্ছা আমার মা কি তোদের কাছে এতোটাই বোঝা হয়ে গেছে? যে তোরা তাকে রান্নাঘরে ফেলে রেখেছিস। আমি আমার মা কে নিয়ে যাবো। সাইফুল তার নানিকে নেওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ির ভিতরে গেলে তখন তার ছোট মামা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে সাইফুল নিষেধ করলে তাকে মারার জন্য বাঁশ নিয়ে ছুঁটে আসে এবং হাতে আঘাত করে তবুও সে মামাকে সম্মান করে কিছু না বলেই তার নানিকে কোলে তুলে নিয়ে যায়। বর্তমানে ১০২ বছর বয়স্ক নহোরন নেছা তার বড় মেয়ের বাড়িতে চিকিসাধীন অবস্থায় আছেন। সাংবাদিকরা তার কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথম পর্যায়ে না বলতে চাইলেও পরে ছোট ছেলে আঃ সালাম ও তারই স্ত্রী রেশমা খাতুনের নির্যাতনের কথা বলেন। তবুও সন্তানেরা বোঝেনা মায়ের ভালোবাসা। এবিষয়ে অভিযুক্ত আঃ সালামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, তেমন কিছু হয়নি আমার ভাগ্নেদের সাথে একটু গন্ডগোল হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *