দর্শনা অফিসঃ দর্শনার বড়বলদিয়ায় জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নিহত শফিকুল ইসলাম শফিকের (৪৫) লাশের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শনিবার বাদ মাগরিব নিহতর নামাজের জানাযা শেষে গ্রামের কবর স্থানে দাফন কার্য সম্পন্ন করা হয়।
এ হত্যা ঘটনায় পুলিশ রাত-ভোর সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে মামলার ৪ আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।
এদিকে হত্যা ঘটনার ২৪ ঘন্টা না পেরুতেই মামলার প্রধান আসামী সহ ৪ জনকে গ্রেফতার করায় গ্রামবাসী সাধুবাদ জানিয়েছে দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ সহ সকল অফিসার ও সদস্যদেরকে।
গত শুক্রবার বিকাল সোয়া ৫ টার দিকে জমিজমা সংক্রান্তের জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়ে নিহত হয় শফিকুল ইসলাম শফিক। ঘটনার পর বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় হত্যাকারীরা। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনা স্থলে পৌছে নিহতর লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায় দর্শনা থানা পুলিশ। এ হত্যা ঘটনায় নিহতর ছেলে আসাদুজ্জামান শান্ত বাদি হয়ে দর্শনা থানায় গ্রামের মৃত আমির হোসেনের ছেলে আবুল কালামকে প্রধান আসামী করে ৭ জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাত আরও ২জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করে। ঘটনার পর থেকে দর্শনা থানা পুলিশ সীমান্ত এলাকা জুড়ে রাত-ভোর চালায় সাঁড়াশি অভিযান। এ অভিযানে ঘটনার দিন রাতে মোছাঃ তাজিরা নামের এক নারী আসামীকে গ্রেফতার করেন। পুলিশ তাজিরাকে গ্রেফতারের পরেও অন্য আসামীদেরকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রাখে। সে মোতাবেক সফলও হন পুলিশ। গত শুক্রবার রাত হতে শনিবার সূর্যের আলো নিভার আগেই হত্যা মামলার প্রধান আসামী সহ ৩ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
জানাগেছে, দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা থানাধীন পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের বড়বলদিয়া গ্রামের মাঝপাড়ার শুকুর আলীর ছেলে শফিকুল ইসলাম শফিক বছর দুয়েক আগে গ্রামের বগা নামের জৈনক ব্যাক্তির নিকট হতে আড়াই কাঠা বসত জমি ক্রয় করে। সে ক্রয়কৃত জমি গ্রামের মৃত আমির হোসেনের ঘর জমাই কালামের দখলে রয়েছে। এ জমি নিয়ে উভয় পরিবারের সাথে প্রায়,প্রায় ছোট-খাটো বিরোধ লেগে থাকতো। তা নিয়ে গত শুক্রবার উভয় পরিবারের মধ্যে বসে সমস্যার সমাধান হয়। যা বাংলা চৈত্র মাসে জমি
দখল মুক্ত করে শফিকুলকে দিয়ে দেবে কালাম। সে কথা মেনে নেওয়ার পর ওইদিন বিকাল সোয়া ৫টার দিকে গ্রামের বাজার হতে শফিকুল ইসলাম শফিক নিজ বাড়ি ফিরছিল। সে বাড়ি যাওয়ার সময় পথিমধ্যে কালামের বাড়ির নিকট পৌছালে কামাল হোসেন, আব্দুস ছাত্তারের ছেলে কালামের ঘর জামাই সুলতান (৪২) সহ তার পরিবারের লোকজন শফিকুলের পথ গতিরোধ করে বিভিন্ন প্রকার হুমকি-ধামকি সহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এসমস্ত কথাবার্তা নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথাকাটা কাটির একপর্য়ায় কালাম সহ তার পরিবারের লোকজন শফিকুল ইসলাম শফিকের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলাকারীদের বাঁশের আঘাতে শফিকের মাথায় আঘাত করলে রক্তাক্ত জখম হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে। এসময় প্রতিবেশী সহ স্থানীয় লোকজন দৌড়ে ঘটনাস্থলে পৌছে শফিককে মৃত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকতে দেখতে পাই। এ ঘটনার পর হামলাকারীরা স্বপরিবারে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। এছাড়া সংঘর্ষের ঘটনায়
নিহতর সহদর বিল্লাল হোসেন ও ঘাতক হত্যাকারী ঘরজামাই কালাম উদ্দিন আহত হয়।
এ ঘটনার খবর পেয়ে দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ মাহাব্বুর রহমান কাজল ও ইন্সপেক্টর তদন্ত (ওসি) শেখ মাহবুবুর রহমান সহ থানার অফিসার এবং সঙ্গীয় ফোর্স ঘটনাস্থলে পৌছে নিহতর লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এ হত্যা ঘটনায় নিহত শফিকুল ইসলাম শফিকের ছেলে আসাদুজ্জামান শান্ত বাদী হয়ে দর্শনা থানায় গ্রামের মৃত আমির হোসেনের ছেলে আবুল কালামকে প্রধান আসামী করে ৭ জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাত আরও ২জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। ঘটনার পর থেকে দর্শনা থানা পুলিশ সীমান্ত এলাকা জুড়ে রাত-ভোর চালায় সাঁড়াশি অভিযান। এ অভিযানে ঘটনার দিন রাতে হত্যা মামলার প্রধান আসামী আবুল কালামের বড় মেয়ে ও ইউনিয়নের ওসমানপুর (বেদেপোতা) গ্রামের ওমেদুল ইসলামের স্ত্রী মোছাঃ তাজিরা খাতুনকে (৪০) গ্রেফতার করেন।
পুলিশের অব্যাহত অভিযানে গ্রেফতার করা হয় মৃত আমির হোসেনের ছেলে হত্যা মামলার প্রধান আসামী আবুল কালামকে (৬৫) ও স্ত্রী মেগীরন নেছা (৫৫) এবং ওসমানপুর (বেদেপোতা) গ্রামের ওমেদুল ইসলামের ছেলে সাগর হোসনকে (২০)।
এদিকে নিহত শফিকুল ইসলাম শফিকের মৃতদেহর ময়না তদন্ত শেষে গতকাল শনিবার বাদ আসর গ্রামের বাড়ি পৌছালে পরিবারের কান্নার আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। শেষ বারের মত নিহতর মৃতদেহ এক নজর দেখার জন্য গ্রামের নারী-পুরুষ ভিড় জমায় শফিকুলের বাড়িতে। এরপর মাগরিব বাদ গ্রামের কবরস্থানে মোরহুমের নামাজের জানাযা শেষে দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়।
দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ মাহাব্বুর রহমান কাজল জানান, জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে দর্শনা থানাধীন পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের বড়বলদিয়া গ্রামের মাঝপাড়ায় প্রতিপক্ষের হামলায় শফিকুল ইসলাম শফিক নামের এক কৃষককে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস্থল হতে নিহতর লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়। নিহতর ছেলে বাদি হয়ে দর্শনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এ মামলার প্রধান আসামী সহ ৪জনকে ইতমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং বাকি আসামীদেরকেও দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিতে সক্ষম হবো বলে আশা করছি।