
বিশেষ প্রতিনিধিঃঈদ যতই নিকটে আসছে, চুয়াডাঙ্গায় দর্জির দোকানগুলোতে ততই বাড়ছে ব্যস্ততা। দর্জিদের এখন যেন দম ফেলানোর ফুরসত নেই। রমজান মাসের মাঝামাঝি সময়ে এসে অধিকাংশ দর্জি নতুন করে আর কোনো অর্ডার নিচ্ছেন না।
এদিকে ক্রেতারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার কাপড় সেলাইয়ের মজুরি বেড়ে গেছে। প্রতিটি পোশাকে আগের চেয়ে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে তাঁদের। তবে দর্জিরা দাবি করছেন, পোশাক তৈরির উপকরণের দাম বাড়লেও তাঁরা মজুরি আগের মতোই নিচ্ছেন।
সাধারণ সালোয়ার কামিজ বা থ্রিপিসের সেলাই ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এ বছর নারীদের লং ফ্রকের চাহিদা বেশ। লং ফ্রকের মজুরি ৬০০ টাকা।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে শহরের প্রাণকেন্দ্র সমবায় নিউমার্কেট ঘুরে দেখা যায়, কাপড়ের দোকান থেকে পছন্দের সিট কাপড় কিনে দর্জির দোকানে ছুটছেন ক্রেতারা। এর মধ্যে নারী ক্রেতাদের সংখ্যাই বেশি। কাপড় সেলাইয়ের জন্য কেউ মাপ দিচ্ছেন, আবার কেউ সিরিয়াল পেতে দোকানের সামনে অপেক্ষা করছেন। কোনো কোনো দোকানের সামনে ‘অর্ডার বন্ধ’ লেখা পোস্টার সাঁটাই করে দেওয়া হয়েছে। আবার ক্রেতাদের অনেক অনুরোধের পর দর্জিরা অর্ডার নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
নিউমার্কেটের এক দর্জির দোকান থেকে ফেরার পথে কথা হয় গৃহিণী রহিমা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কী যে অবস্থা! কোনো অর্ডারই নিতে নিতে চাচ্ছিল না। অনেক বোঝানোর পর অর্ডার দিতে পেরেছি।’
এই মার্কেটের ভিআইপি টেলার্সের মালিক আজাদ রহমান বলেন, ‘রোজার প্রথম সপ্তাহ থেকেই অর্ডার নেওয়া বন্ধ। তারপরও অনেকের অনুরোধ ফেলা যায় না। আমার এখানে কারিগরেরা দিন-রাত কাজ করেও শেষ করতে পারছেন না। শেষমেশ কী হবে, জানি না, খুব চাপে আছি।’
রমজানের মাঝামাঝি সময়ে এসে অধিকাংশ দর্জি নতুন করে আর কোনো অর্ডার নিচ্ছেন না
রমজানের মাঝামাঝি সময়ে এসে অধিকাংশ দর্জি নতুন করে আর কোনো অর্ডার নিচ্ছেন না ।
কাপড় সেলাই করতে আসা একাধিক ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এ বছর সেলাইয়ের মজুরি বাড়িয়ে দিয়েছেন দর্জিরা । কলেজছাত্রী আফরিন রহমান বলেন, সালোয়ার-কামিজ সেলাইয়ের মজুরি বেড়েছে। আগের চেয়ে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। গত বছর তিনি জর্জেট কাপড়ের থ্রি-পিস সেলাই করিয়ে নিয়েছিলেন ৪০০ টাকায়। এ বছর তা ৫০০ টাকা নেওয়া হয়েছে।
কলেজছাত্র সাকলায়েন সাদিক বলেন, গত ঈদে তাঁর পাঞ্জাবি সেলাই করে নিতে খরচ হয়েছিল ৪০০ টাকা। এবার তা ৫৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
তবে সমবায় নিউমার্কেটের মিতা টেইলার্সের পরিচালক হালিমা খাতুনের দাবি, সেলাইয়ের মজুরি আগের মতোই আছে। সাধারণ সালোয়ার কামিজ বা থ্রি–পিসের সেলাই ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এ বছর নারীদের লং ফ্রকের চাহিদা বেশ। লং ফ্রকের মজুরি ৬০০ টাকা। এ ছাড়া গারারা ৬০০ টাকা ও লেহেঙ্গা সেলাইয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।
ছেলেদের পোশাক সেলাইয়ের প্রতিষ্ঠান ডালাস টেইলার্সের ব্যবস্থাপক আলতাফ হোসেন বলেন, বর্তমানে দৈনিক ১৮ জন কারিগর মেশিনে কাপড় সেলাই করছেন। এ ছাড়া পাঁচজন তাঁদের সহযোগিতা করছেন। গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে গিয়ে তাঁদের এখন হিমশিম অবস্থা। প্রতি ঈদের মতোই এবারও পায়জামা-পাঞ্জাবির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। প্রতিটি পাঞ্জাবি ৫৫০ টাকা, পায়জামা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, ফুলপ্যান্ট ৬০০ টাকা ও শার্টের মজুরি ৫০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। তবে আলতাফ হোসেনের দাবি, এবার পোশাক তৈরির উপকরণের দাম বেড়ে গেছে। তবে খরচ বাড়লেও এখনো মজুরি বাড়ানো হয়নি।