জীবননগর অফিস: জীবননগর উপজেলায় খেজুর গাছের রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে গাছিরা। গ্রামীণ জনপদে গাছ প্রস্তুতের দৃশ্য জানান দিতে শুরু করেছে শীতের আগমনী বার্তা। দিনে কিছুটা গরম অনুভব হলেও সন্ধ্যার পর থেকেই গ্রামীণ জনপদে ছড়িয়ে পড়ছে ঠান্ডার আমেজ। সকালে দূর্বা ঘাসের মাথায় শিশির বিন্দু জমে থাকার অপরূপ দৃশ্য অবলোকন করছে গ্রামীণ জনপদের মানুষ। কয়েকদিন ধরে উপজেলার গাছিরা কোমরে দড়ি বেধে ধারালো হাসুয়া দিয়ে প্রস্তুত করছেন খেজুর গাছ। এ অঞ্চলের সুমিষ্ট খেজুর রস ও গুড় এলাকার চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এক সময় এ এলাকায় বসত বাড়ির পাশে পতিত জমি, পুকুর পাড় ও রাস্তার ধারে ধারে সারিবদ্ধভাবে খেজুর থাকলেও বর্তমানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ হচ্ছে খেজুর গাছের।
জীবননগর উপজেলার উথলী ফার্ম পাড়ার খেজুর গাছ চাষী আব্দুস সালাম জানান, বিভিন্ন চাষের পাশা পাশি তিনি নিজের দুই বিঘা জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে তুলেছেন খেজুর বাগান। বছরে শুধু মাত্র শীত মৌসুমে খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরির মাধ্যমে বাজারে বিক্রি করে তিনি এককালীন মুনাফা পেয়ে থাকেন। সেই সাথে খেজুর বাগানে রোদের তীব্রতা কম থাকায় আদা, হলুদ জাতীয় চাষ করে থাকেন। নিজের বাগানের পাশা পাশি বিভিন্ন খেজুর বাগান তিনি চুক্তিভিত্তিতে নেন। মৌসুমে গাছ প্রতি গুড় ৪ কেজি হারে গুড় গাছ মালিককে দিতে হয়। উথলী ইউনিয়নে আবাদী জমির সীমানার উপর জমির মালিকরা খেজুর গাছের আবাদ করেছে। এই আবাদে জমিতে অন্যন্য ফসলের তেমন কোন ক্ষতি হয়না। যার কারণে অধিকাংশ জমি মালিকরা তাদের জমির সীমানায় খেজুর গাছ লাগিয়েছেন।
খেজুর গাছি সামসুল ইসলাম ও আতিয়ার রহমান জানান, খজেুর গাছ থকে রস সংগ্রহরে আগাম প্রস্তুত হিসেবে ইতি মধ্যেই গাছ ঝোড়ার কাজ শেষ করছেনে তারা। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গাছদিরে ধারণা বাজারে এবার গুড়-পাটালরি চাহদিা বেশি থাকবে এবং দামও ভালো পাবেন বলে আশা করছেন তারা। তবে উপজেলার অন্যান্য অঞ্চলে খেজুর গাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। গাছ গুলোর বয়স বেশী হওয়ায় মালিকরা বিভিন্ন ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে উচ্চ মুল্যে গাছ বিক্রি করে দিচ্ছেন।
জীবননগর উপজেলার পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে উথলী, মনোহরপুর, আন্দুলবাড়ীয়া, রায়পুর, হাসাদহ ও বাকা এলাকায় খেজুর গাছের সংখ্যা বেশী থাকলেও অন্যান্য ইউনিয়ন গুলোতে খেজুর গাছের সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত ভাবে কমে গেছে। শীত মৌসুমে খেজুরের নলেন গুড়ের মৌ মৌ গন্ধে গ্রাম গঞ্জে আলাদা আমেজ তৈরি হয়। শীতের সময় প্রতিটি বাড়িতেই খেজুরের গুড় দিয়ে তৈরি হয় হরেক রকমের পিঠা, পায়েস। গ্রাম গঞ্জের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে খেজুর গাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে লক্ষ্য রাখার কথা জানান বয়ো:বৃদ্ধরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *