ষ্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। চতুর্থ পর্যায়ে জমি ও গৃহ হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ঘোষণা দেন। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০ টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার ৪র্থ পর্যায়ে ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের মাঝে জমি ও গৃহ হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন। সেই সাথে চুয়াডাঙ্গা জেলায় চার দফায় মোট ৬শ’ ৯৫টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ সময় চুয়াডাঙ্গা প্রান্তে জেলার চার উপজেলার ৬৯টি ঘর হস্তান্তর করা হয়। এবার ৪র্থ পর্যায়ে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ২৬ টি, আলমডাঙ্গায় ১৭টি, দামুড়হুদায় ১৫টি ও জীবননগরে ১১ টি ঘর প্রদান করা হয়। ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ পর্যায়ে মিলে চুয়াডাঙ্গা সদরে মোট ঘর দেয়া হয়েছে ২০১ টি, আলমডাঙ্গায় ১৯২ টি, দামুড়হুদায় ১৩৮টি, জীবননগরে ১৬৪ টি। আশ্রয়ন প্রকল্পের ১ম পর্যায়ে ঘর তৈরি অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল ১ লাখ ৭১ হাজার, ২য় পর্যায়ে ১ লাখ ৯০ হাজার, ৩য় পর্যায়ে ২ লাখ ৫৯ হাজার, আর ৪র্থ পর্যায়ে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ঘর প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) শহিদুল ইসলাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, খুলনা বিভাগের দ্বিতীয় জেলা হিসেবে চুয়াডাঙ্গা আজকে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত জেলার স্বীকৃতি পাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্যই এই বিশাল আশ্রয়ণ প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দারিদ্র মানুষেরা উপকৃত হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলার অনেক সুনাম আছে। আপনারা নিরক্ষরমুক্ত জেলার দিকেই প্রথম কাতারে আছেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত জেলার স্বীকৃতি পেয়ে আমাদেও খুলনা বিভাগের মুখও উজ্জ্বল হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না’, প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় এ জেলায় ‘ক’ শ্রেণীর (ভূমিহীন ও গৃহহীন) পরিবারের জন্য ৪ দফায় মোট ৬৯৫টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বাকি ৬৯টি পরিবারকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘর হস্তান্তরসহ এ জেলাকে ‘ভূমিহীন ও গৃহহীন’ জেলা হিসেবে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আরও বলেন, ‘আশ্রয়ন প্রকল্পকে কেন্দ্র করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উপসানলয়, ব্যবহার্য পুকুর, কমিউনিটি স্পেস, শিশুদের জন্য পার্ক নির্মানের প্যাকেজ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আগামীতে ‘খ’ শ্রেনীর পরিবারের জন্য জেলায় যাদের জমি আছে ঘর নেই তাদের নতুন ঘর দেয়া হবে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখে, চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু তারেক, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম। আনন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দৈনিক পশ্চিমাঞ্চলের চীফ রিপোর্টার আহসান আলম। উপভারভোগীদের মধ্যে অনূভূতি ব্যক্ত করেন কুতুবপুর ইউনিয়নের রশিদা খাতুন ও তিতুদহ ইউনিয়নের মসলেম আলী।
উপকারভোগী রশিদা খাতুন বলেন, ‘আমাগের আগে এক টুকরো জমিই ছিল না, অ্যাকন পাকা ঘর আর জমির মালিক। টিউবওয়েল, পাকা পায়খানা, ঘরে ঘরে কারেন্টের লাইট-ফ্যান, ভাবতিই মনডা ভালো হয়ে যাচ্চে। আমি অ্যাতো খুশি যে বুলে বুজাতি পাইরব না।’
উপকারভোগী মসলেম আলী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাগের ঘর দিয়েচে, ইতি আমরা খুপ খুশি। ১২ বচরের মেয়ে আরিফারে নিয়ে আগে অন্যির জমিতি মাটির ঘরে থাকতাম। ঝড়-বিষ্টির দিনি ঘুমাতি পারতাম না। অ্যাকন পাকা দিয়াল, মানান টিনির চাল দিয়া নতুন ঘরে আরাম করে থাকচি। মেয়েডাও খুশি, আমিউ খুশি।’