স্টাফ রিপোর্টার:বছর ঘুরে আবার আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে লাখো ভক্তকে ভারাক্রান্ত করে ঘোড়ায় চড়ে বিদায় নিলেন দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা। এরই মধ্য দিয়ে শেষ হলো বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা নদীতে ‘দুর্গা মা কি, জয়। মহামায়া কি, জয়। ‌একের পর এক এমন জয়ধ্বনি, ঢাক-ঢোল, কাঁসর ও ঘণ্টা বাজিয়ে প্রতিমা বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। বিকেলে চুয়াডাঙ্গা বড়বাজারের কেন্দ্রীয় মন্দির থেকে শোভাযাত্রা করে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। এ সময় অনেক ভক্ত কান্নায় ভেঙে পড়েন। সোমবার সকাল ৯টা ৫৭ মিনিট থেকে দেবী বিসর্জনের লগ্ন শুরু হয়। ফলে সকাল থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে নামে ভক্তদের ঢল। এসময় মণ্ডপে মণ্ডপে ঢাকের বাদ্য, শঙ্খধ্বনি, মন্ত্রপাঠ, উলুধ্বনি, অঞ্জলি, নাচ, সিঁদুর খেলা হয়। মুখরিত হয়ে ওঠে মণ্ডপ প্রাঙ্গণ। ধান, দুর্বা, মিষ্টি আর আবির দিয়ে দেবীকে বিদায় জানান ভক্তরা।  
একদিকে বিদায়ের সুর, অন্যদিকে উৎসবের আমেজ। চুয়াডাঙ্গা শহরের বিভিন্ন মণ্ডপে চলে আবির উৎসব।
সকালে দেয়া হয় দর্পণ ঘট বিসর্জন। এমনই আয়োজনের মধ্য দিয়ে দুর্গতিনাশিনী দেবী বাবার বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে গেলেন স্বামীগৃহে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অসুর শক্তি বিনাশকারী দেবী বিদায় নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবী থেকে সব অপশক্তির বিনাশ হবে। শান্তির সুবাতাস ছড়িয়ে যাবে প্রতিমা বিসর্জনের সময় মাথাভাঙ্গা নদীর দুই তীরে হাজারো ভক্ত ও দর্শনার্থী ভিড় জমান। অনেকে প্রতিমা বিসর্জনের সময় নৌকায় করে নদীতে আনন্দ-উৎসব করেন। আবার অনেকে মায়ের বিদায়ের বিরহে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ উপলক্ষে মাথাভাঙ্গা নদীর বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
প্রথা অনুযায়ী, প্রতিমা বিসর্জনের পর সেখান থেকে শান্তির জল মঙ্গলঘটে নিয়ে তা হৃদয়ে ধারণ করা হয়। আগামী বছর আবার এ শান্তির জল হৃদয় থেকে ঘটে,ঘট থেকে প্রতিমার সম্মুখে রেখে পূজা করা হবে। দৈনন্দিন জীবনের বাঁধা হিসেবে আবদ্ধ বাঙালি আসলে পূজার চার দিনে মুক্তির ছোঁয়া পায়। সারা বছরে লুকিয়ে থাকা ইচ্ছে ডানাগুলো এদিক-ওদিক থেকে বেরিয়ে আসে। খুশিয়াল মেজাজে ভর করে তাদের চার দিন অবাধ ওড়াউড়ির সমাপ্তি হলো সোমবার। আবার তাদের গুটিয়ে যায়ার পালা। এবার ফিরে চলা প্রতীক্ষার কাছে। তবে মনের মধ্যে অবিরাম ঢাকের বাদ্য জানান দিয়ে যায় আসছে বছর আবার হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *