তিতুদহ প্রতিনিধি:আতংক নয়, দরকার সতর্কতা ও সচেতনতা, এই স্লোগান নিয়ে নবগঠিত গড়াইটুপি ইউনিয়নের খাসপাড়া গ্রামে “মানবতার জন্য ” স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এর পক্ষ থেকে নিপাহ ভাইরাস সম্পর্কে জনসচেনতা করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে মানবতার জন্য ” স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এর পক্ষ থেকে খাসপাড়া গ্রামে জনসাধারণের মাঝে শীত জনিত রোগ নিপাহ ভাইরাস সম্পর্কে আলোচনা ও পোস্টার বিলি করা হয়। নিপাহ একটি ভাইরাস জনিত রোধ। বাদুড় নিপাহ ভাইরাস রোগের প্রধান বাহক। শীতের আগমনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করা হয় আর এই খেজুরের কাচা রস থেকে এই ভাইরাসটি ছরিয়ে পরে মানুষের মাঝে। দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে কয়েক দিন ধরে শীত পড়তে শুরু করেছে। আর শীতের মৌসুম শুরু হতে না হতেই আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুরের রস আহরণে দেশের প্রতিটি গ্রামে গ্রামে গাছিরা গাছ প্রস্তুত করতে শুরু করেছেন। যার কারনে দ্রুত মানবদেহে ছরিয়ে পড়ছে এ ভাইরাস।
নিপা ভাইরাস হল এক ধরনের আরএনএ ভাইরাস যা প্যারামিক্সোভিরিডি পরিবারের হেনিপাহ ভাইরাসের গণের অংশ। সংক্রমিত পশু ও মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যেমে এই রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। রোগের উপসর্গ থেকে রোগ নির্ণয় করা হয়ে থাকে এবং ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা যায়। সহায়ক চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগের উপশম করা হয়ে থাকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই রোগের কোন টিকা বা বিশেষ চিকিৎসা নেই। বাদুড় ও রুগ্ন শূকর থেকে দূরে থেকে এবং অপরিশুদ্ধ খেজুর রস না পান করে এই রোগের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ২০১৩ সাল পর্যন্ত নিপা ভাইরাসের সংক্রমণে ৫৮২ জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এবং তাদের মধ্যে ৫৪% মৃত্যুবরণ করেছেন ২০১৮ সালে ভারতের কেরালা রাজ্যে এই রোগের আক্রমণে কমপক্ষে ১৩ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এই রোগটি ১৯৯৯সালে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে প্রথম দেখা যায়। সুঙ্গাই নিপাহ নামক মালয়েশিয়ার একটি গ্রামের নামে এই ভাইরাসের নামকরণ করা হয়।সেই সময় এই রোগ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেই জন্য লক্ষ লক্ষ শূকরকে মেরে ফেলা হয়।
রোগের উপসর্গ সংক্রমণের ৩—১৪ দিনের মধ্যে হয়ে থাকে। প্রাথমিকভাবে জ্বর, মাথাব্যথা, পেশীতে ব্যথা, বমি, গলা ব্যথা বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো উপসর্গ দেখা যায়। মাথা ঘোরা, তৃষ্ণা, বেঁহুশ হয়ে যাওয়া, অসংলগ্ন প্রলাপ এবং মস্তিষ্কের তীব্র সংক্ৰমণ জনিত স্নায়বিক লক্ষণ লক্ষ্য করা যেতে পারে। কিছু লোক নিউমোনিয়া, তীব্র বুক যন্ত্রণা সহ তীব্র শ্বাসকষ্টের সম্মুখীন হতে পারেন। শ্বাসকষ্টবিহীন রুগী অপেক্ষা যে সমস্ত রুগীর শ্বাসকষ্ট উপস্থিত হয়, তাদের দ্বারা বেশিমাত্রায় এই রোগ ছড়িয়ে পরার সম্ভাবনা থাকে। ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রুগী অচেতনাবস্থায় চলে যেতে পারেন। অল্পসংখ্যক মানুষ যারা প্রাথমিকভাবে ভালো হয়ে উঠলেও পরবর্তীকালে মস্তিষ্কের সংক্রমণে ভুগতে পারেন। মৃত্যুর হার ৪০% থেকে ৭৫% পর্যন্ত হতে পারে। বর্তমানে নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের কোন কার্যকরী চিকিৎসা নেই। সাধারণতঃ সহায়ক চিকিৎসা দ্বারা এই রোগ উপশমের চেষ্টা করা হয়ে থাকে। নিপাহ ভারিরাস দ্বারা আক্রান্ত এমন প্রত্যেক সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আলাদা করে রাখা প্রয়োজন এবং প্রগাঢ় সহায়ক চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন। পরীক্ষাগারে রিবাভিরিনের কার্যকারিতা লক্ষ্য করা গেলেও মানব শরীরের এর প্রভাব এখনো প্রমাণিত নয়। নিপাহ জি গ্লাইকোপ্রোটিনের বিরুদ্ধে উৎপাদিত একটি হিউম্যান মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি ব্যবহার করে টীকাকরণের প্রভাব পরীক্ষা চলছে। নিপাহ ভাইরাসের পূর্ণতালাভের পক্ষে ক্লোরোকুইন অন্তরায় সৃষ্টি করলেও মানবশরীরে এর কার্যকারিতা এখনো পরীক্ষিত নয়।অস্ট্রেলিয়ায় হিউম্যান মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি এম১০২.৪ মানবশরীরে পরীক্ষা করা হচ্ছে।

এই বিষয়ে সকল শ্রেণীর মানুষকে সচেতন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন “মানবতার জন্য ” স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এর উপদেষ্টা মোঃ মেহেদী সালাম, সদস্য আনোয়ার বাইজীদ, মোঃ হারুন অর রশিদ, এছাড়াও আরো অনেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *