চুয়াডাঙ্গার ছয়ঘড়িয়ায় বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামীলীগ লীগ নেতা জাহাঙ্গীরকে গণপিটুনি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেলে মৃত্যু:১১ জনকে আসামী করে থানায় মামলা
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র কওে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমকে গণপিটুনিতে হত্যার অভিযোগ করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ছয়ঘড়িয়া গ্রামের কেরু অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের খামারের পাশে বালির গাদায় এ ঘটনা ঘটে। গতকাল বুধবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তির পর সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেলে মারা যায় জাহাঙ্গীর আলম। নিহত জাহাঙ্গীর আলম (৩৮) সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের নুরুল্লাপুর বীলপাড়ার রনজিত মল্লিকের ছেলে। এ ঘটনায় জাহাঙ্গীরের বাবা বাদি হয়ে ১১ জনকে আসামী করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন।
হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, গতকাল বেলা ১ টার দিকে ৩ জন লোক রক্তাক্ত আহতাবস্থায় জাহাঙ্গীর আলমকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের সামনে গোলচত্বরে তারা জাহাঙ্গীরকে রেখে সটকে পড়ে। হাসপাতালের সামনে থাকা লোকজন জাহাঙ্গীরকে উদ্ধার করে জরুরি বিভাগে নিয়ে যায় এবং তারাও জাহাঙ্গীরকে জরুরি বিভাগে রেখে সটকে পড়ে। রক্তাক্ত অবস্থায় জাহঙ্গীরকে যখন হাসপাতাল চত্বরে ফেলে রেখে যায় ওই সময় বেশ কয়েকজন তার এই অবস্থার কথা জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর তাদেরকে বলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় এমন হয়েছে। পরবর্তীতে জরুরি বিভাগের স্বেচ্ছাসেবিদের কাছে গণপিটুনির কথা শিকার করে। এ সময় জাহাঙ্গীর বলেন, গতকাল ছয়ঘড়িয়া গ্রামে গিয়েছিলাম পূর্বশত্রুতার জেরে বেশ কয়েকজন তাকে গণপিটুটি দেয়। পরবর্তীতে তারা আমাকে ছয়ঘড়িয়া গ্রামের কেরু অ্যান্ড কোম্পানির খামারের পাশে বালুর গাদার পাশে ফেলে রেখে যায়।
সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ওয়াহেদ মাহমুদ রবিন বলেন, দুপুরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জাহাঙ্গীল আলম নামের এক যুবককে জরুরি বিভাগে আনা হয়। যারা তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে পরবর্তীতে তারা তাকে রেখে চলে যায়। আমরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রাখি।
এদিকে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বেলা ৪ টার দিকে জাহাঙ্গীরের মৃত্যু হয়। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মাহাবুবুর রহমান তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে, জাহাঙ্গীর আলম নামের এক যুবক নিহত হয়েছে এমন সংবাদে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) জাহাঙ্গীর আলমসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা হাসপাতালে ছুটে যান। পরবর্তীতে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ ফখরুল আলম খানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ ব্যাপারে তিতুদহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শুকুর আলী জানান, নিহত জাহাঙ্গীর আলম তিতুদহ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাতক এবং আমার বালুর গাদার ম্যানেজার। গতকাল সেখানে বালু আনতে পাঠালে কয়েকজন তাকে পিটিয়ে আহত করে সেখানে ফেলে রেখে যায়।
নিহত জাহাঙ্গীর আলমের ভাই ইকবাল হোসেন বলেন, বালু উত্তোলন ও চাঁদাবাজি নিয়ে ছয়ঘড়িলা গ্রামের প্রতিপক্ষ একটি গ্রুপের সাথে জাহাঙ্গীরের বিরোধ চলে আসছিলো। সেই বিরোধের জেরে তারা জাহাঙ্গীরকে পিটিয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ ফখরুল আলম খান জানান, গতকাল দুপুর ২ টার দিকে খবর পাই গণপিটুনির শিকার একজনকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওই ব্যাক্তির কাছে জিজ্ঞাসা করলে প্রাথমিক ভাবে সে কোন তথ্য না দিলেও পারবর্তীতে জানতে পারি যে, চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ড নিয়ন্ত্রিত একটি বালুর গাদা আছে ছয়ঘড়িয়া গ্রামে। সেখানে বালু তোলাকে কেন্দ্র করে দুইটি গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছে এবং তারা এখন সেখানে যায় না। প্রাথমিক ভাবে তথ্য পাওয়া যায় নিহত ব্যাক্তি জাহাঙ্গীর একটি বিশেষ গ্রুপের সমর্থক। গতকাল সে ঘটনাস্থলে গেলে অপর গ্রুপের সদস্যরা তাকে মারপিট করে গুরুতর জখম করে। স্থানীয় লোকজন তাকে একাকি পড়ে থাকতে দেখে সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা ৪ টার দিকে জাহাঙ্গীর মৃত্যুবরণ করে। আমরা ঘটনাস্থলে যায় এবং সেখানে যুক্তিগঙ্গত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। যারা এ কাজের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তিনি আরও বলেন, গতকাল রাতে জাহাঙ্গীর আলমের বাবা রনজিত মল্লিক বাদি হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ময়নাতদন্তের জন্য নিহতের মরদেহ সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে।