পশ্চিমাঞ্চল অনলাইন মনিটর:আরাকানে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সাথে ক্রমাগত সংঘর্ষে বেসামরিক লোকদের উপর নির্বিচারে গুলি চালানো সহ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সামরিক নির্যাতনের নানা প্রমাণ পেয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এ ব্যাপারে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জাতিসংঘের সুরক্ষা কাউন্সিলকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আওতায় জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানায়।
সোমবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ছবি ও ভিডিও সহ এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে প্রমাণ মেলে আরাকানের নাগরিকদের কতটা অবজ্ঞার চোখে দেখছে মিয়ানমার সরকার। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের উপ-আঞ্চলিক পরিচালক মিং ইউ হা বলেছেন, আপাতত আরাকান সেনাবাহিনী এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সংঘাতের কোনও লক্ষণ নেই তবে, আমার ধারণা বেসামরিক লোকেরা এই সাংঘর্ষিক তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, দিন দিন তাদের মধ্যে সহিংসতার প্রবণতা বেড়েই চলছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চীন এবং রাখাইন রাজ্যে ছিনতাই ও বোমা হামলায় বেশ কয়েকজন নিহত হওয়ার মত ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনাটি ছিল গত ১৮ সেপ্টেম্বর। ৪৪ বছরের এক চীনা মহিলা মিয়ানমারের একটি সামরিক ঘাঁটির কাছে বাঁশ সংগ্রহ করতে গিয়ে ল্যান্ডমাইনে নিহত হন।
আরেকটি ঘটনা ঘটে গত ৮ সেপ্টেম্বর। মায়বোন জনপদে সামরিক বাহিনীর আক্রমণের স্বীকার হয় মা ও মেয়ে। মেয়েটির বাবা অ্যামনেস্টিকে জানান যে, আক্রমণটি হঠাত করেই হয়েছিল। তবে সেখানে আরাকান বিদ্রোহীরা কেউ ছিল না। গ্রামবাসীরা মনে করছেন তাদের নিকটস্থ মিয়ানমার সামরিক ঘাঁটি থেকে ভারী অস্ত্র চালানো হয়েছিল।
রাখাইন এবং চীন সহ তাদের পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চলে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আরাকান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে আসছে মায়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী ।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ঐ বছরের ডিসেম্বর মাসের হিসেব অনুযায়ী, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর গণহত্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রায় ৬ লাখ ৫৫ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
অ্যামনেস্টি জানায় স্থানীয় নাগরিক কিমিটির তথ্য অনুযায়ী, রাখাইন এবং চিন রাজ্যে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে এই পর্যন্ত সংঘর্ষে ২৮৯ জন নিহত ও ৬৪১ জন আহত হন। শুধু তাই না হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছে ।
অ্যামনেস্টির মতে, তাদের স্যাটেলাইট বিশ্লেষণ উঠে এসেছে সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে মধ্য রাখাইনের একটি গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে মিয়ানমার সেনারা। একজন প্রত্যক্ষদর্শী অ্যামনেস্টিকে জানায়, গত ৩ সেপ্টেম্বর রাখাইনের এইচপা ইয়ার পাউং নামে অন্য একটি গ্রামে আক্রমণ চালায় মিয়ানমার সেনারা। অ্যামনেস্টির মতে, ওই সন্ধ্যায় সামরিক বাহিনী ২ জন রাখাইনকে গ্রেফতার করে এবং পরদিন সকালে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাদের লাশ পাওয়া যায়।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল জাও মিন তুন সাংবাদিকদের বলেছেন, আরাকান সেনাবাহিনী তাদের সামরিক ঘাটির পাশেই একটি গাড়ীর উপর ইম্প্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) দিয়ে আক্রমণ করেছিল। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
মিং ইউ হা বলেন, “রাখাইন রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিৎ দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা, তা না হলে তাদের ব্যর্থতা নিয়ে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে”।